ছবি সংগৃহীত
ঈদুল আজহায় কোরবানি করা পশুর যেকোনো অংশ যেমন—গোশত, চর্বি, হাড্ডি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। তবে বিক্রি করলে পুরো অর্থ নিজের কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৫/৮১)
অভিজ্ঞ আলেমরা বলছেন, যিনি কোরবানি করবেন তিনি তার পশুর মাংস বিক্রি করতে পারবেন না। তবে কোরবানির মাংস কাউকে দান করা হলে তিনি কী করবেন, এ নিয়ে অবশ্য কোরবানিদাতার করণীয় কিছু নেই। এমনকি কোরবানি করা পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে বিনিময় করা ইসলামে জায়েজ নয়। এর অর্থ হচ্ছে কোরবানির কাজে সহায়তাকারী কসাই ও তার লোকদেরও পারিশ্রমিক হিসেবে মাংস দেওয়া যাবে না।
ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র আল কাউসারে এ বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া লিখেছেন, ‘মাসআলা : ৪৪. কোরবানির মাংস, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণমূল্য সদকা করে দিতে হবে। (ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১)
জানতে চাইলে মাওলানা জুনায়েদ আহমাদ ছিদ্দিক বলেন,‘আমরা কোরবানির মাংস আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করি। বিতরণ করার পর এই মাংসের মালিক তখন আর আমরা না, যাকে দেওয়া হলো তিনি মালিক। মালিক হিসেবে এই মাংস তিনি যা খুশি করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘কোনো দরিদ্র ব্যক্তি হয়তো ১০-১৫ কেজি মাংস দান হিসেবে পেলেন, তিনি তো একসঙ্গে সেই মাংস রান্না করতে পারবেন না। অথবা তার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। আবার শুধু মাংস নয়, তার মসলা, চাল, ডালও লাগবে। সেক্ষেত্রে মাংস বিক্রি করে সে হয়তো সেই জিনিসপত্র সংগ্রহ করবে। তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মাংস সংগ্রহ করা অনুচিত কাজ।’
জরুরি কিছু মাসআলা
ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র ‘আল কাউসারে’ মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া কোরবানির পশুর মাংস সংক্রান্ত বিষয়ে মাসআলা বর্ণনা করেছেন।
কাজের লোককে কোরবানির মাংস খাওয়ানো: ‘মাসআলা : ৬৯. কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ নয়। মাংসও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরও মাংস খাওয়ানো যাবে’। (আহকামুল কোরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন)
জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া: ‘মাসআলা : ৭০. কোরবানির পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েজ। তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না’। (কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫)
কোরবানির পশুর হাড় বিক্রি: ‘মাসআলা : ৬৭. কোরবানির মৌসুমে অনেক মহাজন কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কোরবানিদাতার জন্য নিজ কোরবানির কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েজ হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না’। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১)
পশুর চামড়ার ব্যবহার প্রসঙ্গে
পশুর চামড়া কোরবানিদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে, তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য সদকা করা জরুরি। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩০১) পশুর দেহ থেকে চামড়া পৃথক করার আগে তা বিক্রি করা নাজায়েজ। (দুররে মুখতার : ৬/৩২৯)
কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে সদকা করে মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। তা মাদ্রাসা-মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণে খরচ করা জায়েজ নয়। তবে তা লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে উপযুক্ত ব্যক্তির জন্য দেওয়া যাবে। (ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৫৪) কোরবানির চামড়ার মূল্য দিয়ে ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন দেওয়া নাজায়েজ। (শামি : ২/৩৩৯)
সূএ : ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম